সরকারি সেবা হিসেবে গ্রাম আদালতর সেবা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে সকলের সহায়তার আহবান
- উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সন্দ্বীপ
মুন্না সন্দ্বীপী-
গ্রামীণ জনগণের মাঝে কীভাবে গ্রাম আদালতের ওপর ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা যায় যাতে স্থানীয় জনগণ বিশেষত: নারী, দরিদ্র ও বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠী নিজেদের মধ্যকার বিরোধগুলো স্থানীয় পর্যায়ে দ্রুততম সময়ে, স্বল্প খরচে ও স্বচ্ছতার সাথে নিষ্পত্তি করতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনার জন্য সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন এর উদ্যোগে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিদের গ্রাম আদালত বিষয়ে অবহিতকরণ কর্মশালা আয়োজন করা হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগ, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) -এর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের সহযোগিতায় কর্মশালাটি আজ (১৩নভেম্বর ২০১৮) সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে অনিুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল হুদা-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. ফজলুল করিম। প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা ব্লাস্ট-এর উপজেলা সমন্বয়কারী মো. নুরুল আহাদ আরিফ-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন সেশন পরিচালনা করেন বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর উজ্জ্বল কুমার দাস চৌধুরী।
সভাপতি অতিথি তার বক্ততায় বলেন, গ্রাম আদালতের বিচারিক-সেবা সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। এ সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা না থাকায় গ্রামে অনেক ছোট-খাটো ঘটনা ঘটলেও সাধারণ মানুষ তার প্রতিকার চাইতে থানা বা জেলা আদালতে আসেন, যাতে অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। গ্রাম আদালতের সেবা একটি সরকারী সেবা। সাধারণ মানুষের হয়রানী রোধে বর্তমান সরকার বিচারিক সেবা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছে। এই সেবা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করেতে হবে। এক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগি হিসেবে জিও- এনজিও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি গ্রাম আদালতকে কার্যকর করা, স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বাড়ানো এবং সেবা গ্রহণে উৎসাহিত করতে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে আহবান করেন।
তিনি আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে ছোট-খাট বিরোধ কার্যকরভাবে নিষ্পত্তি করা হয়, কিন্তু এই বার্তাটি গ্রামের সাধারণ জনগণ যদি না জানে তাহলে তারা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। গ্রাম আদালতের সেবা সম্পর্কে উপজেলার সকল মানুষকে সচেতন করার জন্য অংশগ্রহণকারীদের আহবান করেন।
তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মীগণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে দেশে সার্বিক উন্নতি অর্জিত হচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন অংশীজন হিসেবে সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, এলাকার জনগণ বিশেষ করে দরিদ্র নারী ও অসহায় জনগোষ্ঠী যাতে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে কম সময়ে ও কম খরচে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারেন এ জন্য আমাদের সবাইকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কমৃকর্তা ডাঃ মো. ফজলুল করিম, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন, সন্দ্বীপ উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি রহিম মোহাম্মদ, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস কামাল বাবু, অঞ্চল সমন্বয়ক নিজেরা করি মতিয়ার রহমান, একটিবাড়ী একটি খামার এর ইউসিও মো বাচ্চু মিয়া এবং ব্লাস্ট-এর জেলা সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সাজেদুল আনোয়ার ভূঁইয়া প্রমূখ। অবহিতকরণ কর্মশালায় সন্দ্বীপ উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন এবং একটি কর্মপরিকল্পণা প্রণয়ন করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর বিচারিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি’র (ইউএনডিপি) অর্থায়নে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প দেশের ২৭টি জেলার ১০৮০টি ইউনিয়নে ক্জ করছে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম জেলার ৫টি উপজেলায় মোট ৪৬টি ইউনিয়নে স্থানীয়ভাবে সহজে, কম খরচে এবং দ্রুত ছোট-খাট বিরোধ বা বিবাদ নিস্পতিতে কাজ করে যাচ্ছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস